সিঁদুর শুধুমাত্র একটি প্রসাধনী নয়, এটি একটি ধর্মীয় প্রতীকও। এই আর্টিকেলে সিঁদুর পরা প্রথার ইতিহাস, তাৎপর্য ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানুন।
হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের সিঁদুর পড়ার নিয়ম প্রথার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই প্রথার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- ধর্মীয় বিশ্বাস: হিন্দু ধর্মে, সিঁদুরকে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেবী লক্ষ্মী ধন, সম্পদ, সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের দেবী। তাই বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর পরেন বলে বিশ্বাস করা হয় যে তাদের স্বামীর দীর্ঘজীবন ও সুখের জন্য দেবী লক্ষ্মী আশীর্বাদ করবেন।
- সামাজিক রীতিনীতি: হিন্দু সমাজে, সিঁদুর পড়াকে বিবাহিত মহিলার পরিচয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর পড়েন বলে বিশ্বাস করা হয় যে তারা সমাজে একটি সম্মানিত স্থানে আছেন।
- প্রসাধনী: সিঁদুর একটি সুন্দর প্রসাধনী হিসেবেও বিবেচিত হয়। বিবাহিত মহিলারা সিঁদুর পরেন বলে বিশ্বাস করা হয় যে তারা তাদের স্বামীর জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠবেন।
সিঁদুর পরা এই প্রথাটি কে চালু করেছিল তার কোন নির্দিষ্ট ইতিহাস নেই। তবে, বিভিন্ন পুরাণ ও ধর্মীয় গ্রন্থে এই প্রথার উল্লেখ রয়েছে।
রামায়ণে, রামের দীর্ঘজীবন ও সুখের জন্য সীতা সিঁদুর পরতেন।
মহাভারতে, দ্রৌপদীর বিবাহের সময়, পাণ্ডবরা তাকে সিঁদুর দিয়ে সাজিয়েছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের জীবনীতে, লক্ষ্মীদেবীর কৃপায় শ্রীকৃষ্ণকে সিঁদুর দিয়ে সাজানো হয়েছিল।
এই গল্পগুলি থেকে বোঝা যায় যে সিঁদুর পরা প্রথাটি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এটি একটি ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি হিসেবে বিবেচিত হয়।
একটি জনপ্রিয় গল্প অনুসারে, দেবী পার্বতী স্বামী মহাদেবকে অশুভ শক্তির থেকে রক্ষা করতে সিঁথিতে সিঁদুর লাগাতেন। এই গল্প থেকে সিঁদুরকে নারীর শক্তি ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
হিন্দু বিবাহের সময়, বর সিঁদুর দিয়ে কনের সিঁথিতে একটি বিন্দু আঁকেন। এই বিন্দুকে "সিঁদুরদান" বলা হয়। সিঁদুরদানকে বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি পবিত্র বন্ধনকে প্রতিনিধিত্ব করে।
সিঁদুর পড়ার নিয়ম প্রথাটি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিছু অঞ্চলে, বিবাহিত মহিলারা শুধুমাত্র তাদের সিঁথিতে সিঁদুর পরেন। অন্য অঞ্চলে, তারা তাদের কপালে, কাঁধে বা মাথায়ও সিঁদুর পরেন।
আধুনিক সময়ে, অনেক হিন্দু মহিলা সিঁদুর পড়ার রীতিনীতি থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন। তারা মনে করেন যে সিঁদুর পড়া একটি পুরনো প্রথা যা আর সময়ের সাথে খাপ খায় না। তবে, অনেক মহিলা এখনও এই রীতিনীতিটি অনুসরণ করেন এবং এটিকে তাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন।