অধ্যায় ৫: নতুন সম্পর্ক, কিন্তু পুরনো অনুভূতি

অভিষেকের জীবন: নতুন মানুষ, পুরনো স্মৃতি

অভিষেকের কর্মস্থল এখন একটা রুটিনে বাঁধা পড়েছে। সকালে অফিস, সন্ধ্যায় একটু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, আর রাতে একা থাকা—সবকিছুই যেন স্বাভাবিক। কিন্তু তার মনের গভীরে কোথায় যেন একটা শূন্যতা জমে আছে।

অফিসে তার এক সহকর্মী, কৌশানী, ওর সঙ্গে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মেয়েটি সুন্দরী, স্মার্ট, কথা বলার ধরনও মিষ্টি। ওদের কাজের টেবিল কাছাকাছি হওয়ায় প্রতিদিনই কথা হয়। কৌশানী বেশ প্রাণবন্ত, সবকিছু নিয়ে মজা করতে ভালোবাসে।

একদিন অফিস শেষে কৌশানী বলল, "অভি, চলো না, কফি খেতে যাই! অফিসের বাইরে তো কখনো তোর সঙ্গে দেখা হয় না।"

অভিষেক একটু ইতস্তত করলেও শেষমেশ রাজি হলো। কফিশপে বসে কৌশানী ওর জীবনের গল্প বলতে শুরু করল—স্কুল লাইফ, কলেজ, প্রথম ভালোবাসা, আর বর্তমান দিনগুলো।

কিন্তু অভিষেকের মন যেন অন্য কোথাও আটকে ছিল। কৌশানীর কথা শুনলেও মাঝেমাঝে সে হারিয়ে যাচ্ছিল অন্য এক স্মৃতির জগতে।

স্টেশনে বিদায়ের সেই মুহূর্ত...

অদিতির চোখের সেই শেষ চাহনি...

অভিষেকের কানে হঠাৎ কৌশানীর কথা ভেসে এলো, "কোথায় হারিয়ে গেলে? তুমিও তোমার গল্প বলো না!"

অভিষেক হেসে বলল, "কী আর বলবো? আমার গল্প তো খুব সাদামাটা।"

কিন্তু তার মনের ভিতরে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল—কৌশানীর সঙ্গে বন্ধুত্বটা এগিয়ে নেওয়া উচিত কি না?

কৌশানী ওকে পছন্দ করে, সেটা বুঝতে অভিষেকের দেরি হয়নি। কিন্তু সে কি সত্যিই নতুন সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তুত? নাকি তার মনের এক কোণে এখনও কেউ রয়ে গেছে?

অন্যদিকে, অদিতির জীবন: পুরী সমুদ্রের সন্ধ্যা

অদিতির বাবা অফিসের কাজে পুরীতে এসেছেন। তাদের হোটেল বাবার অফিসের কাছেই। কয়েকদিনের জন্য পুরো পরিবার পুরীতেই থাকবে, আর বাবা কাজের ফাঁকে সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।

কয়েকদিন পর এক বিকেলে তারা সবাই মিলে সমুদ্রের ধারে গেল। সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রের ঢেউগুলো যেন অন্যরকম লাগছিল। সবাই মিলে মজা করলেও অদিতি একটু একা থাকতে চাইল।

সে একা একা হাঁটতে শুরু করল সমুদ্রের ধারে। বালির উপর পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছিল, অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে, আবার ফিরে আসছে।

 

হঠাৎ করে কেউ একজন পাশে এসে দাঁড়াল।

"এক্সকিউজ মি!"

অদিতি চমকে তাকাল। এক অচেনা ছেলেকে দেখতে পেল, যে বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

"আপনার কাছে কি সময়টা জানা আছে?" ছেলেটি জিজ্ঞেস করল।

অদিতি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় বলে দিল। ছেলেটি হালকা হেসে বলল, "আপনি এখানে ট্যুরে এসেছেন?"

অদিতি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। কী মনে হলো, যেন ছেলেটির চোখের ভাষা চেনা লাগছে।

কিন্তু, কেন?

এই অচেনা ছেলেটাকে দেখে কেন অভিষেকের কথা মনে পড়ছে?

 

পুরনো অনুভূতি, নতুন বাস্তবতা

অদিতি আর ছেলেটির মধ্যে দু-একটা কথা হলো, তারপর ছেলেটি হেসে বিদায় নিল। কিন্তু ওর যাওয়ার পরও অদিতির মন অস্থির হয়ে রইল।

সে বুঝতে পারল, জীবন এগিয়ে যাচ্ছে, নতুন মানুষ আসছে তার জীবনে। কিন্তু কিছু অনুভূতি মনের এত গভীরে দাগ কেটে যায় যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফিকে হলেও পুরোপুরি মুছে যায় না।

একইভাবে, অভিষেকও বুঝতে পারছিল, নতুন সম্পর্কের সুযোগ থাকলেও, ট্রেনের সেই স্মৃতি তাকে এত সহজে ছাড়বে না।

একটা অসম্পূর্ণ অনুভূতি...

যা হয়তো হারিয়ে যাবে না কখনোই।

1 2 3 4 5 6
Blog Categories

My Diary

Music Related