লিংক পেজ  

Image
 

হাওড়া স্টেশনের ব্যস্ত প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের ধাতব শব্দ আর যাত্রীদের কোলাহল মিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করেছে। নায়ক অভিষেক, কাজের প্রয়োজনে খড়গপুরে যাওয়ার জন্য D3 কোচের ২৪ নম্বর সিটে বসেছে। জানালার পাশে বসে সে মগ্ন চোখে প্ল্যাটফর্মের দৃশ্য দেখছিল। কিছুক্ষণ পর পাশের সিটগুলোতে একটি পরিবার এসে বসল। পরিবারের মধ্যে একজন মেয়ে—লাল-সবুজ চুড়িদার আর মুখভরা হাসি নিয়ে। সে তার মায়ের পাশে বসেছিল।

মেয়েটি মাঝে মাঝেই অভিষেকের দিকে কৌতূহলী চোখে তাকাচ্ছিল। অদ্ভুত এক নির্লিপ্ততা ছিল সেই চাওয়ায়, যেন নিজের অজান্তেই কারও দিকে প্রথমবার দেখছে। মেয়েটি সুযোগ পেতে অপেক্ষা করছিল, আর সেই সুযোগ এল যখন তার মায়ের সিট পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো। মেয়েটি উঠে দ্রুত অভিষেকের সামনের সিটে এসে বসল। অভিষেক তার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়েছিল, কিন্তু মেয়েটি মিষ্টি হেসে মুখ নামিয়ে নিল।

Image

কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর মেয়েটি সংকোচের সঙ্গে বলল, "আপনি কোথায় যাচ্ছেন?" অভিষেক তার ফোনটি পকেটে রেখে বলল, "খড়গপুর। অফিসের কাজে। আপনি?" মেয়েটি একটু লজ্জা পেয়ে জানাল, "আমরা ভুবনেশ্বর যাচ্ছি। বাবা কাজের জন্য যাচ্ছেন।" তাদের কথোপকথন শুরু হলেও মেয়েটির কণ্ঠে একটা দ্বিধা ছিল। সে জানত তার পরিবার হয়তো এমন খোলামেলা কথা বলা পছন্দ করবে না। তবুও, যেন কোনো অজানা আকর্ষণে বাধ্য হয়ে সে আরও কিছু বলতে চাইছিল। অভিষেকও বেশ স্বাভাবিকভাবে কথা চালিয়ে যাচ্ছিল।

মেয়েটির নাম জানা গেল—অদিতি। সে স্কুলে পড়ে, লেখাপড়া আর বই পড়া তার খুব প্রিয়। সে নিজের পছন্দের বই আর গান নিয়ে গল্প করছিল। কিন্তু কথা বলার সময়, বারবার তার চোখ ফ্যামিলির দিকে চলে যাচ্ছিল। তাদের সন্দেহভরা দৃষ্টি স্পষ্ট ছিল।

একসময় অদিতির বাবা তাকে ইশারায় ডাকল। মেয়েটি একটু অনিচ্ছা নিয়েই উঠে গেল। পরিবারের সদস্যরা তাকে বেশ গম্ভীরভাবে কিছু বলছিলেন। “অচেনা ছেলের সঙ্গে এত কথা বলার মানে কি? এসব ঠিক নয়।” মেয়েটি মাথা নিচু করে সব শুনছিল।

অভিষেক জানালার বাইরে তাকিয়ে এসব দেখতে পাচ্ছিল। তার মনেও একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছিল। হয়তো অদিতির মনের কষ্টটা তার চোখেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

এরই মধ্যে ট্রেন খড়গপুর স্টেশনে ঢুকে পড়ল। অভিষেক ব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। যাওয়ার আগে তার চোখ মেয়েটির দিকে গেল। আর মেয়েটিও তাকিয়ে ছিল অভিষেকের দিকে। দুজনের মধ্যে কোনো কথা হলো না, কিন্তু তাদের দৃষ্টি যেন একে অপরের মনের কথা বলে দিচ্ছিল।

অভিষেক জানত, এই দেখা শেষ। আর কখনো তাদের দেখা হবে না। তবুও, সেই মুহূর্তে দুজনের মধ্যেই এক টুকরো স্মৃতি তৈরি হলো। অদিতি ট্রেনের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অভিষেককে দেখতে লাগল, যতক্ষণ না সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।

মেয়েটির মনে হলো, কিছু বলার ছিল। হয়তো কেবল বিদায়ই। কিন্তু বাস্তবের কঠোরতা সেই কথাগুলো আর উচ্চারণ করতে দিল না। অভিষেকের মনেও একটা হালকা খচখচানি রয়ে গেল। জীবন হয়তো তাদের এই অচেনা বন্ধনকে আর এগিয়ে নিয়ে যাবে না, কিন্তু ট্রেনের এই যাত্রা তাদের মনের কোনো এক কোণে চিরকাল থেকে যাবে।




 


 Part 1


1 2 3 4 5 6 7 8
Blog Categories

My Diary

Music Related