অধ্যায় ৩: ফেলে আসা মুহূর্তের সুর

ট্রেন ছুটে চলেছে ভুবনেশ্বরের দিকে, আর অদিতি জানালার পাশে বসে রেললাইনের শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের মনের গুঞ্জন শুনছিল। রাত নামার সাথে সাথে ট্রেনের কামরা আরও শান্ত হয়ে গেল। বাইরে অন্ধকার, মাঝে মাঝে কোনো স্টেশনের আলো অদ্ভুত এক মায়া ছড়িয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তার মনে আলো-অন্ধকারের খেলা চলছিল অন্য একভাবে।

তার চোখে ভেসে উঠছিল অভিষেকের শেষ মুহূর্তের সেই চাহনি। যেন সে কিছু বলতে চেয়েও পারেনি, কিছু জিজ্ঞাসা করতে চেয়েও থেমে গিয়েছিল। কিন্তু কেন? কী ছিল সেই চোখে?

অভিষেকের মনোভাব

অন্যদিকে, অভিষেক তখন নিজের হোটেলের ঘরে বসে একটা নীরব সন্ধ্যার সাক্ষী হচ্ছিল। ফোনটা হাতে নিয়েও কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। মনের মধ্যে শুধু একটা কথাই বাজছিল, “ও কি আমায় মনে রাখবে?”

তার জীবনে বহু মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, বহু বন্ধুত্ব, অনেক সম্পর্ক, কিন্তু এই ছোট্ট ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা যেন অন্যরকম। এটা প্রেম ছিল না, বন্ধুত্বও নয়। এটা একধরনের আকর্ষণ, যা এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনকে ছুঁয়ে যায়, কিন্তু যার কোনো নাম দেওয়া যায় না।

নতুন অনুভূতি, পুরনো শাসন

ট্রেনের মধ্যে অদিতির বাবা-মা এখনো মেয়ের দিকে সন্দেহভরা চোখে তাকাচ্ছিলেন। তারা হয়তো কিছু বুঝতে পারেননি, কিন্তু অনুভব করতে পারছিলেন মেয়ের আচরণে পরিবর্তন এসেছে। মা ধীরে ধীরে বললেন,

— “অদিতি, ঠিক আছিস তো?”

অদিতি একটু চমকে গেল, তারপর হাসি দিয়ে বলল,

— “হ্যাঁ মা, ঠিক আছি।”

তার মা কিছুক্ষণ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, যেন মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল। কিন্তু তিনি আর কিছু বললেন না।

স্মৃতির আঁকিবুঁকি

ট্রেনের জানালায় কুয়াশার আস্তর জমতে শুরু করেছিল। বাইরে অন্ধকার, মাঝে মাঝে দু’একটা আলো দ্রুত পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অদিতির মনে সেই আলো যেন অতীতের কিছু মুহূর্তের মতো ভেসে উঠছে।

সে ভাবল, “যদি আবার দেখা হয়? যদি কোনো একদিন হঠাৎ কোথাও ওর সাথে দেখা হয়ে যায়? যদি ওর চোখে আবার সেই একই প্রশ্ন দেখতে পাই?”

কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে। জীবনের সব সম্পর্ক পূর্ণতা পায় না। কিছু সম্পর্ক শুধু স্মৃতি হয়েই থেকে যায়, কিছু অনুভূতি শুধু মনের কোণে জমে থাকে।

অভিষেকের উপলব্ধি

হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে অভিষেক চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল,

— “জীবন তো থেমে থাকবে না, কিন্তু কিছু স্মৃতি রয়ে যায়, কিছু না বলা কথা, কিছু অসম্পূর্ণ অনুভূতি।”

সে জানে, অদিতির সঙ্গে তার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু, কোথাও একটা আশা রয়ে যায়। এই সম্পর্কের কোনো নাম নেই, কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু তার অনুভূতিগুলো সত্যি ছিল।

তারপর অভিষেক নিজের ফোনটা খুলল, এবং অজান্তেই ট্রেনে তোলা একটা ছবি দেখল—যেখানে জানালার পাশে বসে থাকা অদিতির মুখের আবছা ছায়া দেখা যাচ্ছিল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনটা রেখে দিল।

সমাপ্তি, নাকি নতুন শুরু?

ট্রেন আরও দ্রুতগতিতে ছুটছিল। রাত গভীর হচ্ছিল, কিন্তু মনের ভাবনারা আরও জেগে উঠছিল।

অদিতি জানত, সে আর কোনোদিন অভিষেকের দেখা পাবে না। হয়তো অভিষেকও একই কথা ভাবছিল।

কিন্তু জীবন কি কখনো অনুমান অনুযায়ী চলে? হয়তো এই গল্প এখানেই শেষ, অথবা কোনো অজানা মোড়ে আবার শুরু হবে নতুন করে...

1 2 3 4 5 6
Blog Categories

My Diary

Music Related