অধ্যায় ১: অগোছালো অনুভূতি

অর্ণব ডেস্কের সামনে বসে আছে, কিন্তু তার চোখ কম্পিউটার স্ক্রিনে ঠিকভাবে আটকে নেই। মনটা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে।

একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন তৈরি করার কথা, কিন্তু সে বারবার অন্য চিন্তায় চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই মন ফিরে যায় সেই পুরোনো স্মৃতির কাছে—সোহিনীর সাথে কাটানো সময়, তাদের শেষ ঝগড়া, আর সেই কষ্টের মুহূর্ত যখন সে বুঝেছিল, সব শেষ।

কাজের মাঝে হঠাৎই সহকর্মী অনিরুদ্ধ পাশে এসে বলল, "কিরে, তোর কি শরীর খারাপ? এত গম্ভীর মুখ করে বসে আছিস কেন?"

অর্ণব ধাতস্থ হয়ে বলল, "না, কিছু না। একটু ক্লান্ত লাগছে।"

কিন্তু অনিরুদ্ধ বুঝে গেল, এটা ক্লান্তি নয়—এটা মন খারাপ।

সত্যি বলতে, গত কয়েক মাস ধরে অফিসে বসেও অর্ণবের মন বারবার পিছনে ফিরে যাচ্ছে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে, যখন সোহিনীর ফোনকলগুলোই ছিল সবচেয়ে বড় স্বস্তির মুহূর্ত। এখন সেই নাম্বার মুছে ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যাস কি এত সহজে বদলানো যায়?

অর্ণবের চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই সন্ধেটা—

"আমাদের সম্পর্কটা আর আগের মতো নেই, অর্ণব। আমাদের বুঝতে হবে, আমরা একসঙ্গে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না..."

সোহিনীর ঠান্ডা গলা, অথচ অর্ণব স্পষ্ট বুঝতে পারছিল, এই সম্পর্ক থেকে সে বেরিয়ে যেতে চাইছে।

সে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, "দেখো, সমস্যাগুলো ঠিক করা যায়। সম্পর্ক মানেই কি সব সময় ভালো সময় থাকবে?"

কিন্তু সোহিনী বুঝিয়ে দিয়েছিল, তার জন্য এই সম্পর্কটায় আর শান্তি নেই। আর তারপর থেকে অর্ণব যেন এক অদ্ভুত শূন্যতায় ডুবে গেছে।

অফিসের মধ্যে বসে থেকেও, মিটিং চলাকালীন, এমনকি লাঞ্চ ব্রেকে সহকর্মীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময়ও মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই তার মনে পড়ে যায় সেই পুরোনো দিনগুলো।

আজও মনে পড়ছে—সোহিনী কী সুন্দর হেসে বলত, "এই জানো, তুমি না একদম সিরিয়াস টাইপ! একটু মজার হও!"

আর আজ সে সত্যিই সিরিয়াস হয়ে গেছে।

কিন্তু বাস্তবতা তাকে ধাক্কা দিয়েছে। তার পরিবার বলছে, "তোর বয়স হয়ে যাচ্ছে। এত দেরি করলে ভালো মেয়ে পাবি না। এবার আমরা একটা ভালো মেয়ে দেখে তোর বিয়ের ব্যবস্থা করব।"

অর্ণব কিছুই বলেনি। সে জানে, একসময় তাকে এগোতেই হবে, কিন্তু এখনো মনের মধ্যে কোথাও একটা জায়গা জুড়ে আছে সোহিনী।

Image

অন্যদিকে, মেহুল…

রাতের বেলা ছাদে বসে আছে মেহুল। ফোনটা হাতে ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তিতাসের কোনো মেসেজ বা কল নেই।

বিকেলের ঝগড়াটা মনে পড়ছে বারবার।

"তুমি সবকিছু এত সিরিয়াসলি নাও কেন?"

তিতাসের বলা কথাটা এখনও কানে বাজছে। সত্যিই কি সে বেশি ভাবছে? নাকি তিতাসের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে?

আগে তিতাস ওর জন্য পাগল ছিল। ছোটখাটো জিনিসেও ওর যত্ন নিত, খোঁজ নিত। কিন্তু এখন যেন সবকিছুই দায়িত্বের মতো হয়ে গেছে। ফোন করলেও তিতাসের মধ্যে সেই উচ্ছ্বাস নেই।

এটাই কি সম্পর্কের স্বাভাবিক পরিণতি? নাকি তিতাস ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে?

কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে মেহুল একটা মেসেজ লিখল—

"রাগ করেছো?"

সেন্ড করার আগেই আবার ডিলিট করে দিল।

কেন যেন মনে হলো, অপেক্ষা করাটাই ভালো। যদি তিতাস সত্যিই ওকে নিয়ে ভাবে, তাহলে নিজেই কল করবে।

কিন্তু রাত বাড়তে থাকল, আর ফোনটা নিঃশব্দ পড়ে রইল…





 Part 1


1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Blog Categories

My Diary

Music Related