তিতাস জানে, মেহুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক দিনের। ভালোবাসা, অভ্যাস, একসঙ্গে কাটানো হাজারো মুহূর্ত—সবকিছু মিলিয়ে তারা একে অপরের জীবনের বড় অংশ। তবুও, গত কয়েক মাস ধরে তিতাসের মনে কিছু অজানা অনুভূতি জেগেছে, যা সে বুঝতে পারছিল না।
এই পরিবর্তনের শুরুটা হয় কলেজেরই এক নতুন বন্ধু, অন্বেষার সঙ্গে আলাপের পর থেকে। প্রথম দিকে, তিতাস এটাকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বন্ধু হিসেবেই কথা বলত, আড্ডা দিত। কিন্তু কবে যেন সেই কথাগুলো একটু বেশি হয়ে গেছে, কবে যেন সেই আড্ডাগুলো অপেক্ষার কারণ হয়ে উঠেছে, সে নিজেও জানে না।
অন্বেষার সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যে একটা স্বস্তি খুঁজে পেত তিতাস। ওর হাসিটা যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিত, ওর চিন্তাভাবনা, জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছুই নতুন মনে হতো। একদিন বিকেলে, অন্বেষার সঙ্গে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ তিতাস খেয়াল করল, মেহুলের একটা ফোন এসেছে। স্ক্রিনের ওপরে ভেসে থাকা সেই নামটা দেখে তিতাসের বুকের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি তৈরি হলো। ফোনটা ধরতে ইচ্ছে করল না, যদিও কিছুক্ষণ পরেই সে নিজেকে সামলে নিল।
তিতাস জানে, এটা অন্যায়। মেহুল ওকে ভালোবাসে, এখনো সবটুকু দিয়েই সম্পর্কটা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু তিতাস? সে কি পারছে?
সেদিন রাতে মেহুল ফোন করেছিল, খুব সাধারণ কিছু কথা বলার জন্য। তিতাসের মনে হচ্ছিল, সে যেন আলাদা হয়ে যাচ্ছে, একটা দেয়াল তৈরি হচ্ছে। মেহুল হয়তো টের পাচ্ছে না, কিন্তু তিতাসের মনে হচ্ছিল, সে আর আগের মতো নেই।
পরের দিন অন্বেষার সঙ্গে ক্যাম্পাসের একটা নির্জন জায়গায় বসে ছিল তিতাস। হঠাৎ করেই অন্বেষা বলল, "তুই কী ভাবছিস?"
তিতাস চমকে গেল, মনে হলো এই একটা প্রশ্ন যেন ওর ভিতরের সবকিছু উলটপালট করে দিল। সে কি সত্যিই মেহুলের সঙ্গে সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়? নাকি সে শুধু একটা অভ্যাসের ঘেরাটোপে আটকে আছে?
তিতাস তখনো পুরোপুরি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কিন্তু একটাই জিনিস নিশ্চিত বুঝতে পারছিল—তার মন বদলে যাচ্ছে।