বিকেলের আলো তখন জানালার ফাঁক গলে ঘরে পড়ছিল। অর্ণব একটা বই নিয়ে বসেছিল, কিন্তু মনোযোগ দিতে পারছিল না। মা এখন একটু ভালো আছেন, তবে শরীরের দুর্বলতা এখনও কাটেনি। ঠিক সেই সময় দরজার ঘণ্টা বাজল।
— "অর্ণব, দরজা খুলবি?" মা ভেতর থেকে ডাকলেন।
অর্ণব দরজা খুলে দেখল, সামনের মানুষটাকে একঝলকেই চিনতে পারল—তুলিকা দিদি, তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়া। ছোটবেলায় দু-একবার দেখেছে, এরপর আর তেমন যোগাযোগ ছিল না।
— "বয়স হয়েছে তো, আর কতদিন চলবে এই শরীর! এখন তোর ভাইয়ের জন্য একটা ব্যবস্থা করে যেতে চাই।" মা একটু মুচকি হাসলেন।
অর্ণব পাশে বসে শুনছিল, কিন্তু কোনো মন্তব্য করল না।
— "তা, তোর ভাবনা তো ভালোই, কিন্তু পাত্রী পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা?" তুলিকা হাসল।
— "কেন? তুই তো অনেক চেনাশোনা মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা করিস, কাউকে দেখেছিস?"
তুলিকা একটু ভেবে বলল, "আচ্ছা, একটা ব্যাপার বলি… আমি যাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে যাই, তারা বেশ ভালো পরিবার। তোর ভাইয়ের জন্য ওদের মেয়েটাকে দেখলে খারাপ লাগবে না। নাম মেহুল।"
অর্ণব চমকে উঠল। এই নাম তার একদম অপরিচিত নয়, কিন্তু সম্পর্কের কোনো বাঁধনে বাঁধা ছিল না কখনো।
— "মেহুল? ও কে?"
— "ওর বাবা-মা আমার চেনা। খুবই ভালো ঘরের মেয়ে। শিক্ষিত, ভদ্র। আমি যখন প্রথম ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম, তখনই মনে হয়েছিল ও একটা ভালো পরিবারে গেলে খুব মানিয়ে নিতে পারবে।"
অর্ণব কিছু বলল না। এই নামটা তার জীবনে কোনো বিশেষ জায়গা নেয়নি, কিন্তু এখন ভাগ্যের এক অদ্ভুত মোড়ে এসে তার সামনে হাজির হলো।
— "তুই যদি চাস, তাহলে আমি একটু কথা বলে দেখতে পারি।" তুলিকা বলল।
— "আমি তো এখনও কিছু ভাবিনি…" অর্ণব আস্তে বলল।
মা পাশে থেকে বললেন, "ভাবিস না, আমি তোর জন্য ভাবছি!"
অর্ণব হাসল না, কেবল চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে রইল। জীবনের এই অদ্ভুত মোড় তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, সে নিজেও জানে না।