কলকাতার ব্যস্ত বিকেল। শহরের শপিং মলগুলোতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে, তার মাঝেই মেহুল আর তার মা আজ কিছু কেনাকাটার জন্য বেরিয়েছে। প্রায় সব কেনাকাটা শেষ, এখন শুধু একটা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে দু’জনে।
ঠিক তখনই কেউ একজন পিছন থেকে ডাকল, "দিদি?"
মেহুলের মা একটু অবাক হয়ে পেছনে তাকালেন, তারপর মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন।
"তুলিকা! তুই এখানে?"
তুলিকা একটু হাসল, "হ্যাঁ, আপনাকে দেখে ভাবলাম কথা বলি। কতদিন পরে দেখা!"
মেহুল আগেও লক্ষ করছিল, কিন্তু এখন ঠিকমতো তাকিয়ে দেখল মহিলাকে। পরিপাটি শাড়ি পরা, হাতে অফিস ব্যাগ, চোখে বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি।
তার মা বেশ খুশি হয়ে বললেন, "তুই কেমন আছিস? অনেক দিন পর দেখা, কোথায় থাকিস এখন?"
"আমি ভালোই আছি। এখনো ওখানেই কাজ করছি, অফিসে দৌড়ঝাঁপ লেগেই আছে। কিন্তু আপনাকে দেখে ভালো লাগল, এতদিন পর দেখা!"
মেহুল এবার খেয়াল করল তার মা সত্যিই অনেকটা আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলছেন। কিন্তু এতদিন তো সে এই নাম শোনেনি!
তার মা একটু হাসলেন, "তুলিকা, এটা আমার মেয়ে মেহুল।"
তুলিকা মেহুলের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি নিশ্চয়ই ভাবছো, আমি কে?"
মেহুল বিনয়ের সঙ্গে মাথা নাড়ল, "হ্যাঁ, মা তো আগে কখনো বলেনি আপনার কথা।"
তুলিকা হাসল, "বলবে কীভাবে? আমরা তো শেষ দেখা করেছি বহু বছর আগে। আসলে আমি তোমার বাবার অফিসের পাশের এক অফিসে কাজ করতাম। তখন তোমার মা’র সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, তারপর বন্ধুত্ব। যদিও জীবনের ব্যস্ততায় আমাদের আর ঠিকমতো দেখা হয়নি।"
মেহুল এবার বুঝতে পারল, তার মা কেন এত আপন করে কথা বলছিলেন।
তার মা তুলিকার দিকে তাকিয়ে বললেন, "এইভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি। তুই ভালো আছিস তো?"
তুলিকা একটু ইতস্তত করে বলল, "ভালোই আছি, তবে একটা দরকারি কথা ছিল। কিন্তু এখন তাড়া আছে, পরে একদিন আপনাদের সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।"
মেহুলের মা একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, "কী ব্যাপার? কিছু গুরুতর?"
"না, ঠিক গুরুতর নয়। তবে ব্যাপারটা একটু ব্যক্তিগত। আপনার সঙ্গে একান্তে কথা বললেই ভালো হয়।"
তার মা একটু ভেবে বললেন, "তা হলে এক কাজ কর, কাল সকালে আমাদের বাড়িতে চলে আয়। আজ একটু ব্যস্ত আছি, তুই এলে আমরা আরাম করে বসে কথা বলতে পারব।"
তুলিকা একটু ভেবে মাথা নাড়ল, "ঠিক আছে, কাল সকালে আসার চেষ্টা করব।"
এ কথা বলে তুলিকা ব্যস্তভাবে বেরিয়ে গেল।
মেহুল কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, "মা, উনি কি তোমার খুব কাছের বন্ধু?"
তার মা একটু হাসলেন, "আমাদের বন্ধুত্ব অফিসের সময় থেকেই, তোমার বাবার মাধ্যমে ওর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তুই তো তখন ছোট ছিলি, তাই হয়তো মনে নেই। কিন্তু বেশ ভালো মেয়ে, দুঃখ একটাই—এত বছর ধরে আর ওর সঙ্গে দেখা হয়নি।"
মেহুল কিছু বলল না, শুধু মাথা নেড়ে নিল। তবে তার মনে অদ্ভুত একটা সংশয় তৈরি হলো। তার মা বললেন, তুলিকা শুধু বাবার অফিসের পরিচিত ছিলেন, কিন্তু উনি হঠাৎ করে কী এমন ব্যক্তিগত কথা বলতে চান?