চতুর্থ অধ্যায়: মায়ের ইচ্ছা, অর্ণবের দ্বিধা

অর্ণব বসে আছে নিজের ঘরে, জানালার পাশে। রাতের আকাশে চাঁদের আলো পড়েছে তার টেবিলের উপর, কিন্তু সে যেন সেই আলোও টের পাচ্ছে না। এক হাতে ফোন ধরা, পুরনো মেসেজের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু কিছুই পড়ছে না। তার মনে এখনো সেই পুরনো সময়, সেই সম্পর্ক, সেই ভালোবাসার স্মৃতি ঘুরপাক খাচ্ছে।

ঠিক তখনই দরজার কাছে কড়া নাড়ার শব্দ হয়।

"অর্ণব, তোর সঙ্গে একটু কথা বলব?"

মায়ের কণ্ঠে এক অদ্ভুত নরম অনুভূতি। অর্ণব তাকিয়ে দেখে, মা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। শাড়ির আঁচলটা সামান্য এলোমেলো, চোখে এক অদ্ভুত ক্লান্তি। হয়তো সারাদিনের কাজের পরও কিছু না বলা কথার ভার তার বুকে চেপে আছে।

Image

"এসো মা, বসো," অর্ণব ধীর স্বরে বলে।

মা এসে খাটের পাশে বসেন। কিছুক্ষণ কোনো কথা হয় না, যেন ঘরের নিস্তব্ধতাই সব বলে দিচ্ছে। তারপর মা হালকা শ্বাস ফেলে বলেন—

"দেখ, বাবা, তোর বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে আজ দুবছর হয়ে গেল। একা হাতে তোকে বড় করেছি, তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল ওর! তোকে মানুষ করতে গিয়ে নিজের কত ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিয়েছিল, তোর জন্য ভালো কিছু হোক, সেটাই ছিল ওর একমাত্র চাওয়া।"

অর্ণব চুপচাপ মায়ের কথা শুনতে থাকে। আজ অনেকদিন পর মা এভাবে বাবার কথা বলছে। "ও চলে গেল হঠাৎ করে, আর রেখে গেল শুধু কিছু স্মৃতি। জানিস, তোর বাবা বলত, 'আমার ছেলেটা একদিন অনেক বড় হবে, ভালো থাকবে, সুন্দর একটা জীবন পাবে।' কিন্তু এখন তোর মুখের দিকে তাকালেই কষ্ট হয়, বাবা। তোর মধ্যে সেই হাসিটা নেই, সেই উচ্ছ্বাস নেই। তুই কি সত্যিই ভালো আছিস?"

"ও চলে গেল হঠাৎ করে, আর রেখে গেল শুধু কিছু স্মৃতি। জানিস, তোর বাবা বলত, 'আমার ছেলেটা একদিন অনেক বড় হবে, ভালো থাকবে, সুন্দর একটা জীবন পাবে।' কিন্তু এখন তোর মুখের দিকে তাকালেই কষ্ট হয়, বাবা। তোর মধ্যে সেই হাসিটা নেই, সেই উচ্ছ্বাস নেই। তুই কি সত্যিই ভালো আছিস?"

অর্ণব কোনো উত্তর দেয় না। শুধু মাথা নিচু করে থাকে। মা এবার একটু কাছে এসে বলে—

"তুই তো জানিস, তোর বাবার একটা স্বপ্ন ছিল—সে চেয়েছিল তার ছেলের বউকে একবার দেখে যেতে। কিন্তু সেটাই আর হলো না। আমি অন্তত সে সুখটুকু পাব না, বাবা?"

মায়ের গলায় যেন একটু কান্নার আভাস। অর্ণবের বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। মাকে কখনো এভাবে সে দেখেনি।

"আমার আর কতদিন আছে জানি না। কিন্তু এর আগে যদি তোকে নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে দেখি, তাহলে আমার মন শান্ত হবে। তুই তো জানিস, মা-বাবারা কখনো নিজের জন্য কিছু চায় না, শুধু সন্তানকে সুখী দেখতে চায়।"

অর্ণব এবার মুখ তুলে মায়ের দিকে তাকায়। চোখ দুটো তার ভারী হয়ে আসছে, কিন্তু সে নিজেকে শক্ত রাখে। মায়ের চোখেও জল চিকচিক করছে।

"মা, আমি এখনো বিয়ের ব্যাপারে ভাবতে পারছি না। আমি জানি না আমি এখন নতুন কাউকে জীবনে জায়গা দিতে পারব কিনা। কিন্তু তোর কথা আমি বুঝেছি। আমি ভেবে দেখব, ঠিক আছে?"

মা এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে, তারপর মৃদু হাসে।

"আমি জানি, তুই তোর বাবার মতোই জেদি। কিন্তু সময় তো কারও জন্য থেমে থাকে না, বাবা। তুই একটু ভাবিস, আমি তোর পাশে আছি।"

এই বলে মা উঠে চলে যান, কিন্তু ঘরের পরিবেশটা যেন একেবারে ভারী হয়ে থাকে।

অর্ণব জানালার বাইরে তাকায়, দূরে একটা তারা ঝিকমিক করছে। তার মনে হয়, হয়তো বাবা সেখান থেকে তাকিয়ে আছে, অপেক্ষা করছে তার সিদ্ধান্তের জন্য।

সে সত্যিই কি নতুন জীবনের কথা ভাবতে পারবে? নাকি তার পুরনো স্মৃতিই তাকে আটকে রাখবে?





 Part 4


1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Blog Categories

My Diary

Music Related