পঞ্চম অধ্যায়: স্মৃতির ছায়া

মা ঘর থেকে চলে যাওয়ার পর অর্ণব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে, মা তাকে কিছু বলবে না, জোরও করবে না, কিন্তু তার চোখের সেই আকুতি অর্ণবকে কষ্ট দিচ্ছে।

সে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে, দূরে অন্ধকার আকাশের মাঝে এক চাঁদের টুকরো দেখা যাচ্ছে। হালকা বাতাস পর্দা দুলিয়ে দিয়ে যায়, আর সেই নীরবতার মাঝে পুরনো স্মৃতিগুলো যেন ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে।

সেই দিনগুলো...

"অর্ণব, তুমি এত গম্ভীর কেন?"

সে ফোনের ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শুনতে পায়। কতদিন আগের কথা, মনে নেই। হয়তো তিন বছর আগে।

Image

"আমি গম্ভীর? না তো!"

"আচ্ছা? তাহলে এখন বলো তো, আমার কানে একটা ভালোবাসার কথা শোনাবা না?"

অর্ণব মুচকি হেসে বলেছিল, "ভালোবাসা কি শুধু কথায় বোঝানো যায়?"

ওপাশ থেকে অভিমানী কণ্ঠ ভেসে এলো, "তাহলে আমি কি বুঝব না তুমি আমাকে ভালোবাসো?"

অর্ণব তখনো হাসছিল।

তবে কেন এত দূরত্ব?

সেই ভালোবাসার দিনগুলো হঠাৎ করেই যেন বদলে যেতে থাকে। কথায় কথায় ঝগড়া, একে অপরকে না বোঝার প্রবণতা।

"অর্ণব, তুমি সব সময় এত ব্যস্ত থাকো! আমার জন্য কি একটুও সময় নেই?"

"আমি কাজ করি, এটা তো তুমি বুঝতে পারো, তাই না?"

"হ্যাঁ, বুঝি। কিন্তু আমি কি একটু সময়ের দাবিদার নই?"

অর্ণব বিরক্ত হয়েছিল, "তুমি কি সব সময় আমার সময় নিয়ে অভিযোগ করবে? আমিও তো চাই তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে, কিন্তু কাজ না করলে ভবিষ্যৎ কীভাবে গড়ব?"

ওপাশ থেকে নিরবতা ছিল। তারপর ধীরে ধীরে সেই নিরবতাই দূরত্ব হয়ে উঠেছিল।

একদিন সেই নিরবতার মাঝেই এসেছিল শেষ কথা—

"অর্ণব, আমাদের মধ্যে যা ছিল, সেটা হয়তো শেষ হয়ে গেছে। হয়তো আমরা আর একে অপরের জন্য ঠিক ছিলাম না।"

অর্ণব সেদিন কিছুই বলেনি। হয়তো অভিমানে, হয়তো ব্যথায়।

বর্তমানের ছায়া

সে চট করে ঘরের দিকে ফিরে তাকায়। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, ফোনটা নিয়ে আবার নম্বরটা ডায়াল করবে। হয়তো জিজ্ঞেস করবে, "কেমন আছো?"

কিন্তু হাত এগিয়েও পিছিয়ে আসে।

না, সব কিছু বদলে গেছে। সময়, মানুষ, সম্পর্ক—সবই।

তবে কি সে সত্যিই আর কাউকে জীবনে জায়গা দিতে পারবে না? মা ঠিকই বলেছিল, সময় তো কারও জন্য অপেক্ষা করে না।

অর্ণব জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো ভবিষ্যৎ কোথাও তার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু সে কি সেই পথে হাঁটার জন্য প্রস্তুত?





 Part 5


1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
Blog Categories

My Diary

Music Related